Saturday, March 26, 2016

একটি পত্রিকার অপমৃত্যু




আমি এক লেখায় বলেছিলাম পাঠাগার আন্দোলন(শুধু পাঠাগার না, যে কোন সংগঠনের ক্ষেত্রেই) করতে গিয়ে দুই ধরণের বাধা আসে। একটা সংগঠনের ভিতর থেকে অপরটি আসে বাইরে থেকে।বাইরের বাধা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এবার ভিতরের বাধা নিয়ে আলোচনা করবো। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে এই লেখাটা দাড় করাতে চাচ্ছি। তাই কিছুটা স্পর্শকাতর বিষয়। যেহেতু ঘটনাগুলো সাম্প্রতিক সময়ের তাই অনেকের মনে আঘাত লাগতে পারে। লেখার সুবিধার জন্য আমি নকল নাম ব্যবহার করছি।

একটা বিজ্ঞান সংগঠনের কাজ শুরু করার ইচ্ছা ছিলো দীর্ঘ দিনের। ২০০৯ সালে পরিচয় হয় সবুজের সাথে।রুয়েটের ছাত্র সে।ওখানে ম্যাথ অলিম্পিয়াড কমিটির স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে।তাকে অনুরোধ করি আমাদের এলাকায় এরকম একটা সংঘঠন শুরু করা যায় কি না।সে রাজি হয়ে যায়। একের পর এক বিদ্যালয়ে সেমিনার করতে থাকে। দুই মাসের মধ্যে আমারা ভূঞাপুরে একটা ম্যাথ অলিম্পিয়াড করতে সক্ষম হই। বিজ্ঞানমেলা, অলিম্পিয়াড, সেমিনার ইত্যাদি নানা কার্যক্রম চলতে থাকে আমদের।ইতিমধ্যে আমারা শ্রেষ্ঠ গণিত সংগঠনের পুরুস্কার পাই আমাদের এলাকার সব মেধাবী ছেলেরা যুক্ত হতে থাকে এর সাথে।সবুজের এক বড় ভাই নিলয়। যুক্ত হয় আমাদের সাথে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সে।আমাদের নানা ভাবে সাহায্য করে। অর্থ দিয়ে বুদ্ধি, পরামর্শ দিয়ে।

তাঁর আগ্রহেই তাকে সংগঠনের আহ্ববায়ক করা হয়।

বাংলা ভাষায় ভালো কোন বিজ্ঞান পত্রিকা ছিলো না তখন। আমারা সিধান্ত নেই একটা ত্রৈমাসিক বিজ্ঞান পত্রিকা বের করার।নানা আলোচনা পর্যালোচনার পর সিধান্ত হয় আমি সম্পাদক, নিলয়, সবুজ, মান্না ওরা হবে সহযোগি সম্পাদক। সবাই লেখা দিবে অথবা লেখা মেনেজ করে দিবে।প্রতি সংখ্যার জন্য কেউ ২হাজার , ১হাজার টাকা দিবে।

কিন্তু প্রথম সংখ্যায় সবুজ লেখা দিলেও আর কেউ লেখা দেয়নি।নানা সুতায় কেউ লেখা দেয় নি। পত্রিকা বের করতে যে আরো নান কাজ আছে তাতেও তারা সহযোগিতা করেনি। ২য় সংখ্যায় কেউ কোন যোগাযোগ রাখে নি।প্রায় ৫০,০০০ হাজার টাকা ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেই।
সম্পদকীয় প্যানেলে নাম থাকা এবং তাদের সম্মতি থাকা সত্বেও তারা কেন চুপ মেরে গেলেন। এটাই ছিলো আমার প্রশ্ন। সংগঠণের প্রথম আহ্বয়ক, প্রথম সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ইত্যাদি ছিলেন তারা সবাই। তারপরও তারা কেনো থেমে গেলেন।কেনো তারা কোন প্রকারের যোগাযোগ রাখলেন না।

সংগঠনের জন্য নিলয়ের চাপাচাপিতে একটা রুম ভাড়া করা হয়।প্রতি মাসে দিতে হবে এক হাজার টাকা করে। প্রথম মাস কেউ কেউ দিলেও পরবর্তী এক বছর তার কেউ টাকা দেয়নি। কিন্তু দিবে না যে সেটাও তারা বলেনি।ফোন দিলে তারা ফোনও রিসিভ করেনি।পরে সেখানে আরো ১২ হাজার টাকা ঋণে পড়া হয়।

সভাপতি করা হয় রবিনকে পাবনা টেক্সটাইলের ছাত্র। ভালো কথা বলতে পারে। এবং লিখতেও পারে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে তার লেখা প্রকাশও হয়।সংগঠনের এই দূর দিনে সে পদত্যাগ করে বসে।তাকে নানা ভাবে অনুরোধ করা হয়।তাকে এও অনুরোধ কার হয় পরবর্তী কমিটি না হওয়া পর্যন্ত তুমি থাকো।কিন্তু সে মেইল করে তার পদত্যগপত্র জমা দেয় আমার কাছে।তারপরেও তাকে আমি অনুরোধ করি পরবর্তী মিটিং এর আগ পর্যন্ত তোমার এই পদত্যাগের কথা কাউকে বলবো না। এর মধ্যে তুমি তোমার সিধান্ত পরিবর্তন করলে আমারে জানাইয়ো। না সে আর ফিরে নি।।

এভাবেই একটি প্রতিষ্ঠিত সংগঠন মৃত্যুর দাঁড় প্রান্তে গিয়ে দাড়ায়। অথচ এই সংগঠনের সদস্য ছিলো একটি উপজেলার সবচেয়ে প্রতিভাবান ছেলে-মেয়েরা।তাদের পদ পদবীরও অভাব ছিলো না। কেন তারা নিরব হয়ে যায়? কেন ছিন্ন ভিন্ন করে দেয় একটি প্রতিষ্ঠিত সংগঠনকে?

গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন করতে গিয়ে পরিচয় হয় এক বড় ভাইয়ের সাথে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্র সে।নান ধরণের সংগঠন করেন।ছবির হাটে আড্ডা জামান রাজনীতি, সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে। গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন নিয়ে তার ব্যাপক আগ্রহ।কয়েকবার বসাও হয় তার সাথে।নানা পরিকল্পনার পৃষ্ঠার একটা খসড়া লেখাও দেখান আমাকে।

একদিন এক বড় ভাই গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের নামে একটা ওয়েব সাইট করে দিতে চান।শেয়ার করি ঢাবির বড় ভাইয়ের সাখে।তিনি বলেন আমিই করে দিচ্ছি। প্রায় মাস পরে তিনি আমাকে একটা সাইট খুলে দেন। যেটা আপনার দেখতে পাচ্ছেন। তাও প্রায় বছর হয়ে যাচ্ছে। সাইটটাকে উন্নত করার জন্য আমি এর পাসওয়ার্ড চাই।তিনি আমাকে নানা সুতায় সেই পাসওয়ার্ড আমাকে এখনো দেনি।
দুই পয়গাম্বরের নামধারি এই বড় ভাইয়ের কি সমস্যা? কিংবা আমার ছোট ভাইদের। তাদের কি ক্ষমতা ঘাটতি ছিলো? তাদের কি যথাপযুক্ত সম্মান দেয়া হয় নি? খুব কি কাজের চাপ ছিলো? বিদ্যা-বুদ্ধির অভাবা ছিলো?কিংবা অর্থের? না , এসবের কিছুই ছিলো না। তাহলে?
তাহলে-আরো এক বিপন্ন বিস্ময় আমাদের অন্তর্গত রক্তের ভিতর খেলা করে।
হিংসা, ইরষা, পরস্ত্রীকাতরতা, শঠতা, হঠকারিতা, দায়িত্বজ্ঞান হীনতা, ইত্যাদি নানা কারণ যা আমরা হাজার বছর ধরে আমাদের রক্তের ভিতর বহন করে চলছি, তাই আামদের পিছিয়ে দিচ্ছে আর আমরা পরাজিত হচ্ছি।

আমি আবারো ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমার সব ভাইয়েদের কাছ থেকে যাদের নাম এই লেখায় ব্যবহার করতে হলো। কাউকে হেয় বা ছোট করার জন্য এই লেখাটি লেখা হয় নি। একটি সংগঠন করতে গেলে সংঘঠককে এই ধরণের সমস্যার অবশ্যই মোকাবেলা করতে হবে।সমস্যা সম্পর্কে যদি আগে থেকেই ধারণা থাকে তাহলে তার সমাধানওে করা

যারা গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী তারা স্বপ্নের কথা এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।